মাদারীপুরে বাঙ্গী চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা
শহিদুল ইসলাম লিখন:
মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আগাম বাঙ্গী চাষ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের শত-শত কৃষক আগাম বাঙ্গী চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগাম বাঙ্গী চাষ করে প্রতি বছর লাভবান হচ্ছে মাদারীপুরের কৃষক। তাই প্রতি বছর এ অঞ্চলে আগাম বাঙ্গীর ফলন ভাল হওয়ায় এবং বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাষীরা আগাম বাঙ্গী চাষে ঝুঁকে পড়েছে।
বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মধ্যে বাজিতপুরের বাঙ্গী বিশমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় দিন দিন এর কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংশি¬ষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরের ভয়াবহ বন্যায় জেলার কয়েক ‘শ হেক্টর আবাদী জমিতে বালুর স্তর পড়ায় কৃষকের জীবনে নেমে আসে এক ভয়াবহ বিপর্যয়। অনাবাদী হয়ে পড়ে শতশত হেক্টর জমি। বালু অপসারণ করে কৃষকের ভাগ্যের চাকা বদলে দিতে শুরু করে আগাম বাঙ্গী চাষ। বাঙ্গী চাষে সফলতা আসতে শুরু করায় এ চাষে আবাদী জমির পরিমান ও কৃষকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রতি বছরই লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বাঙ্গী চাষ করে লাভবান হচ্ছে জেলার বাঙ্গী চাষীরা।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার চার উপজেলায় এ বছর ১১০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গী চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রাজৈরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৩ হেক্টর। ৪৩ হেক্টরের মধ্যে ৩৫ হেক্টরই চাষাবাদ করা হয়েছে রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের সুতারকান্দি, গঙ্গাবর্দ্দী, নয়াকান্দি ও কোদালিয়া গ্রামের শতাধিক কৃষক আগাম বাঙ্গী চাষ করছে। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগাম বাঙ্গী চাষাবাদ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবছর অধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে বাঙ্গী চাষে কিছুটা বিলম্ব হয়। অন্যান্য বছর অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু করে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাঙ্গীর চাষাবাদের কাজ সম্পন্ন করা হয়। জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে বাঙ্গী ফসল উঠতে শুরু করে। এ বছর আগাম বাঙ্গী ফসল জানুয়ারীর শেষ দিকে পুরোদমে উঠা শুরু করবে বলে কৃষক এবং কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। বাঙ্গী উত্তোলনের কাজ চলবে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত।
৫২ শতকের প্রতি বিঘায় বাঙ্গী চাষে কৃষকের খরচ হচ্ছে ১৫/২০ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভাল থাকলে এবং পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেলে আগাম বাঙ্গী ফসলে বিঘা প্রতি প্রায় এক লাখ টাকা আয় হবে। ভালো ফলনের জন্য জমিতে নিয়মিত পানি, ডিআইবি সার, টিএসপি ও পটাস সার এবং পোকা-মাকড় মারার কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এ অঞ্চলের একই জমিতে বাঙ্গীসহ তিন ধরণের ফসল উৎপাদন হওয়ায় মানুষ নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন। আগাম বাঙ্গী দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। এখানকার বাঙ্গি পাকানোর জন্য কোন প্রকার ঔষধ বা কৃত্রিম কোন কিছু ব্যবহার করা হয় না বলে জানা গেছে। এ কারণে এখানকার বাঙ্গী বেশ সুস্বাদু। বাঙ্গী উঠা শুরু করলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শতশত কৃষক তাদের উৎপাদিত আগাম বাঙ্গী বিক্রি করে থাকে।
বাজিতপুরের সুতারকান্দি গ্রামের আব্দুল আলিম ফকির জানান, তিনি ৫২ শতকের ৯ বিঘা জমিতে আগাম বাঙ্গী চাষ করেছেন। তার প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। তার বিঘা প্রতি লাভ হবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এ বছর তার জমিতে আশানুরূপ ভাল ফলন পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। কৃষি বিভাগ থেকে তাকে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি এলাকায় আগাম বাঙ্গী চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটানোর জন্য ব্যাংক থেকে সুদমুক্ত কৃষি ঋণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
রাজৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, বাঙ্গী একটি অর্থকরী ফসল। আগাম বাঙ্গী চাষ করে রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নের কৃষকরা ক্রমশ লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জিএমএ গফুর জানান, বাঙ্গী উৎপাদনে এবং পোকা-মাকড় দমনে কৃষকদের মাঝে সেক্সফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় কৃষকরা বিশমুক্ত বাঙ্গী উৎপাদন করতে সফল হচ্ছেন। জেলায় এ বছর ১১০হেক্টর জমিতে বাঙ্গী চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রাজৈরে ৪৩ হেক্টর, শিবচরে ২০হেক্টর, কালকিনিতে ৫ হেক্টর ও মাদারীপুর সদর উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে আগাম বাঙ্গী আবাদ করা হয়েছে। রাজৈর উপজেলায় যে বাঙ্গী চাষ করা হয়েছে। তা সবই আগাম বাঙ্গি। আগাম বাঙ্গী চাষের জন্য রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে।